• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টিতে, অস্বস্তি জলাবদ্ধতায়



    সারাদেশের মতো গরমে অতিষ্ট চট্টগ্রামের মানুষেরাও বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছিলেন বহুদিন ধরে। মাঝখানে এক–দুবার বৃষ্টি পড়লেও তাতে মন ভরেনি নগরবাসীর। অবশেষে বহুল প্রতিক্ষীত সেই বৃষ্টি এলো একরাশ স্বস্তি নিয়ে। টানা তিন ঘণ্টা ধরে পড়া ঝুমবৃষ্টিতে তাপমাত্রাও নেমে এসেছে ত্রিশের নিচে। কিন্তু স্বস্তির সেই বৃষ্টিই কিনা পরে হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্বস্তির-ভোগান্তির।

    কেননা ঝুম বৃষ্টিতে ভেসে গেছে শহরের নিম্নাঞ্চল আর বাতাসের তোড়ে কোথাও সড়কে উপড়ে পড়েছে গাছ, কোথাও বা ঘরের চাল উড়ে গেছে।

    সোমবার (৬ মে) বিকেল তিনটা থেকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে শুরু হয় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি। বৃষ্টির শাসন চলতে থাকে এক টানা তিন ঘণ্টা। এরপর থেমে থেমে পড়তে থাকে বৃষ্টি।

    আবহাওয়া অধিদফতরের পতেঙ্গা কার্যালয় তিন ঘণ্টায় ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মেঘনাৎ তংচঙ্গা বার্তা২৪.কমকে বলেন, সোমবার বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে।

    ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চল

    বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, চকবাজার, শুলকবহর, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠে গেছে। বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি আটকে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় সড়কে মানুষের মিছিল নামে। অনেকেই হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে ফিরেন।

    বেশিরভাগ এলাকায় হাঁটু সমান পানি উঠে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন। বিশেষ করে কাপাসগোলা ও চকবাজার এলাকায় নালা ও সড়কের পানি একাকার হয়ে যাওয়ায় মানুষজনকে ভোগান্তি ও সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছিল। কেননা একটু এদিক ওদিক হলেই নালার পানিতে ভেসে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এসব এলাকার নিচতলা ও দোকানও পানিতে তলিয়ে গেছে।

    চকবাজার একাধিক মানুষ জানান, মানুষ গরম পড়লেই বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। আর আমরা ভয়ে থাকি বৃষ্টির কথা শুনলে। কেননা বৃষ্টি পড়লেই শুধু সড়ক না দোকানও ডুবে যায়। এই যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাব জানি না।

    প্রায় একই কথা বলেছেন শুলকবহর এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি হলেই পানি উঠবে, এটা যেন চট্টগ্রাম শহরের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা নিচতলায় বাস করেন, তারাই বোঝেন বৃষ্টির যন্ত্রণা কি? সড়ক হয়ে পানি ঢুকে গেছে বাসার নিচ তলাতেও। দিনভর অফিস শেষে এখন সেই পানি সরাচ্ছি। রাতে আবার ভারি বৃষ্টি হলে পুনরায় পানি উঠে যাবে।

    বৃষ্টির কারণে সড়কে গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে শত শত শিক্ষার্থীকে হেঁটে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে। আর কোনো গাড়ি এলেই সবাই সেই গাড়িতে উঠার জন্য হুড়োহুড়ি করছিলেন।

    সড়কে ভেঙে পড়েছে গাছ

    বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার তোড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। এ কারণে ওই সব সড়কে যান চলাচল ব্যাঘাত ঘটে।

    কাজির দেউড়ির বন্ধ হয়ে যাওয়া শিশু পার্কের তিনটি বড় শিরীষ গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে। এই কারণে সড়কের এক পাশে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গাছগুলো কেটে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। একইভাবে খুলশীর জাকির হোসেন সড়কেও বেশ কয়েকটি গাছ সড়কের ওপর ভেঙে পড়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়।

    গাড়িভাড়া দ্বিগুণ

    বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে গ্যাসচালিত টেম্পোতে জনপ্রতি পাঁচ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার অজুহাতে গাড়ি চালকেরা সেই ভাড়া নিচ্ছেন দশ টাকা করে।

    বহদ্দারহাট মোড়ে টেম্পোচালকদের উঠানামা দশ টাকা হারে ভাড়ার জন্য হাঁকডাক করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে একজন চালক বলেন, সড়কে পানি উঠে গেছে। পানির ওপর দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুঁকির। যে কোনো সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে তবুও আমরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। সেজন্য বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।

    একইভাবে চকবাজার-আগ্রাবাদ রুটেও দ্বিগুণ ভাড়া নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

    প্রকাশিত। সোমবার ০৬ মে ২০২৪