• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে ২৭ জন নিহতের খবরটি ভুয়া

     

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি ব্রিজ ভেঙে ব্রাস–ট্রাক খালে পড়ে ২৭ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছে’ মর্মে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। সরাইল–নাসিরনগর–লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে বলে নানাজনের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়। তবে ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালের অনুসন্ধানে খবরটি ভুয়া বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

     শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে একটি জাতীয় দৈনিকের নাসিরনগর সংবাদদাতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে অনেকেই এমন পোস্ট করে। এসব পোস্ট দ্রুত শেয়ারও করে অনেকে। মুহূর্তেই নাসিরনগর ও পাশের উপজেলা হবিগঞ্জের লাখাইসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে এটি। স্থানীয়দের অনেকে নাসিরনগর সদরের উত্তর পাশের মহাখাল ব্রিজ এলাকায় ছুটে যায়। 

    ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল অংশ থেকে শুরু হওয়া একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নাসিরনগর হয়ে লাখাই উপজেলায় গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির নাসিরনগর অংশে অন্তত চারটি ব্রিজ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি নাসিরনগরের বেণিপাড়া এলাকায় একটি ব্রিজের দুপাশের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটির মাঝামাঝি জোড়ার অংশ কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দ্রুত সংস্কারের বিষয়টি গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসনের সভায় তোলেন নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 

    এ বিষয়ে গণসচেতনার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে স্যাটায়ারধর্মী একটি পোস্ট করেন মাহমুদ, সঙ্গে ব্রিজ ভেঙে পড়ার কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়। তবে গোল বাঁধে তাঁর লেখার শুরুর ‘ব্রেকিং নিউজ’ শব্দদ্বয় এবং ‘এই শোক সইবার নয়’ লাইনটি নিয়ে। ‘২৭ জন নিহত ৪৩ জন আহতের’ অংশ পড়ে কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং পুরো পোস্ট না পড়েই নিজেরা একই রকম কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকে। অনেকেই শেয়ার করেছে। 

    নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে ২৭ জন নিহতের যে খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে, তা ভুয়া। ছবি: ইনডিপেনডেন্টআব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তাঁর ফেসবুক পোস্ট লেখেন, ‘ব্রেকিং নিউজ, এই শোক সইবার নয়। নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানের আর সন্তানের সামনে মা-বাবার লাশ। স্বজনদের আহাজারিতে সয়লাব চারপাশ– এমন একটা সংবাদই হয়তো অপেক্ষা করছে নাসিরনগরবাসীর সামনে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। তখন শোক প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। হাজার কোটি টাকা দিয়েও দুর্ঘটনায় নিহত কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করবে।’  

    মাহমুদের এই পোস্টের ‘নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানের আর সন্তানের সামনে মা-বাবার লাশ।’ অংশটুকু কপি করে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করে অনেকে। এসব পোস্ট শেয়ারও হয় কয়েক ডজন। 

    এই পোস্টকারীদের একজন আল ইমরান। তিনি ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘অন্যদের ফেসবুক পোস্টে বিভ্রান্ত হয়েই এমন পোস্ট করেছিলাম। এটা একটা রিউমার ছিল।’

    ইনডিপেনডেন্টের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, ‘খবরটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই এমন ভুয়া, অতিরঞ্জিত ও বিকৃত তথ্য প্রচার হয়। আমি মনে করি সাংবাদিক, লেখক ও সচেতন মানুষজনের কোনো কিছু পোস্ট করার আগে ভালোভাবে তথ্য যাচাই করা উচিত।’

    নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘খবরটি ভুয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা আমাকে ফোন করে সত্যতা জানতে চেয়েছে। স্থানীয় একজন সাংবাদিক এমন পোস্ট করায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। ওই সাংবাদিক ব্রেকিং নিউজ লিখে এমন পোস্ট করা মোটেও ঠিক হয়নি।’

    এ বিষয়ে কথা বলতে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুল হক ভূঁইয়ার সরকারি সেলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
    প্রকাশিত শুক্রবার ২২ মার্চ ২০২৪