পদ্মা সেতুতে রেল চালু, একধাপ এগোল চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার পাড়ি দেয় ট্রেনটি। রাজধানী ঢাকার কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি ৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায়। এই ট্রেনের সবগুলো কোচই চীনের নির্মিত। ট্রেনটিতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৬০০ জন যাত্রী ছিলেন।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের সেতুর ভায়াডাক্ট বিভাগের উপপরিচালক শামীমা নাসরিন বলেন, ‘আমরা সাফল্যের একটি মাইলফলক ছুঁয়েছি এবং এই সাফল্যের কৃতিত্ব চীনাদের দিতেই হবে। আমরা চীনা ঠিকাদার চাইনিজ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনকেও (সিআরইসি) এর কৃতিত্ব দিতে চাই।’ ঘটনার দিন ট্রেনটি যখন পদ্মা সেতুর নিকটবর্তী একটি স্টেশন পার করছিল, তখন সেখানে উপস্থিত চীনা এবং বাংলাদেশি কর্মীরা নিজ নিজ দেশের ছোট পতাকা হাতে ট্রেনকে স্বাগত জানায়।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের পরিচালক শি ইউয়ান বলেন, ‘সাড়ে পাঁচ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর আমরা এই প্রকল্পের অগ্রাধিকারমূলক অংশটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ রেলপথ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার অন্যতম জি-টু-জি (সরকার-সরকার) প্রকল্প এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প।’ এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অংশীদার হতে পেরে খুবই খুশি এবং গর্বিত।’
চীনের বিআরআই হলো, প্রাচীন সিল্ক রুটের পুনরুজ্জীবন প্রকল্প। তবে এটি এর চেয়েও বেশি কিছু। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার দেশগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে প্রাচীন সিল্ক রুটের ওপর দিয়ে সড়ক-রেল এবং নৌপথে যুক্ত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ঘোষণা করেন। সেই প্রকল্পটিই বিআরআই নামে পরিচিত।
প্রথম সেই ট্রেনযাত্রায় যাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জানান, আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করবেন। চীনকে উন্নত প্রযুক্তির দেশ উল্লেখ করে রেলপথমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতেও চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এ সময় তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এটি ঢাকা থেকে শুরু হয়ে যশোর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই রেলপথের পুরো কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা নদী পার হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ফেরি। কিন্তু গত বছরের জুনে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় ফেরি বা নৌকায় পদ্মা পারাপার এখন কেবলই ইতিহাস।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু ও রেলপথ উভয়ই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ দুটি প্রকল্প আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকাশিত মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩