সাত দিনেও বেঁধে দেওয়া আলু পেঁয়াজ ও ডিমের দর কার্যকর হয়নি
দর বেঁধে দেওয়ার পর সাত দিনের বেশি সময় পার হলেও এখনো কার্যকর হয়নি আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিমের দর। দুই একটি বাজারে দরদাম করে বেঁধে দেওয়া দরে ডিম পাওয়া গেলেও আলু ও পেঁয়াজ অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দর বেঁধে দিলে কী হবে? আমরা কি পাইকারি বাজার থেকে এসব পণ্য কম দামে কিনতে পারি? কম দামে কিনতে না পারলে কম দামে বিক্রি করব কীভাবে?
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, শান্তিনগর বাজার ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও ফার্মের বাদামি রঙের ডিমের হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা অর্থাত্ এক হালি ৪৮ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু দর বেঁধে দেওয়ার সাত দিন পর গতকাল বাজারে গিয়ে নির্ধারিত দরে এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়নি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনে ‘দর বেঁধে দেওয়া পণ্যগুলো’ বেশি দামে বিক্রির তথ্য তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, গত কিছু দিন ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থির। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এক শ্রেণির অসত্ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফার লোভে এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে। তারা এক সঙ্গে কখনো একাধিক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, আবার কখনো একটি পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট করছে। তাই এসব পণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমাতে উত্পাদনসহ অন্যান্য খরচ ও মুনাফা যোগ করে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দর বেঁধে দিয়েছে। সম্প্রতি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা ও প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিম, আলু, পেঁয়াজের পাশাপাশি সয়াবিন তেল, চিনির দামও কার্যকর হয়নি। ফলে ভোক্তারা হতাশ।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেছেন, যেসব ব্যবসায়ী আলু সংরক্ষণ করেছেন, তারা দাম বাড়াচ্ছেন। হিমাগারগুলোতে তদারকি না করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বাড়লে তখন বেঁধে দেওয়া দরে পণ্য পাওয়া যাবে। গতকাল শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা কবির হোসেন বলেন, সরকার কয়েকটি পণ্যের দর বেঁধে দিল, কিন্তু লাভটা হলো কী? আলু, পেঁয়াজের দাম কি কমেছে? দাম কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, গত কিছু দিনে সব পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এমনকি সবজির দামও চড়া। কিন্তু মানুষের আয় কি বেড়েছে? এদিকে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার গত বৃহস্পতিবার নতুন করে আরো ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মোট ১০ কোটি ডিম আমদানি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিকৃত ডিম দেশের বাজারে ঢোকেনি। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘অনুমতি দেওয়া ডিম দ্রুত আমদানির জন্য বলা হয়েছে। অনেক বেশি ডিম আমদানি করতে দেওয়া হলে দাম কমবে বলে আশা করছি।’
বেঁধে দেওয়া দর কার্যকরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালালেও পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তাদের লোকবল কম। এছাড়া, অভিযানের সময় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালাচ্ছেন। গত রবিবার রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজারে অভিযান চলাকালে অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। কেউ কেউ আবার ত্রিপল দিয়ে দোকান বন্ধ করে বাজারের আশপাশে অবস্থান নেন। অনেকেই আবার শাটার লাগিয়ে দোকান পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার খুচরা বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের জরিমানা করছে। কিন্তু আমাদের তো এসব পণ্য বেশি দামে কেনা।’
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এখন অভিযানে গেলে খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের রশিদ দেখিয়ে বলেন, বেশি দামে কেনা। কিন্তু এখন তো দাম কিছুটা কমেছে। ডিমের দাম বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পাড়া-মহল্লার দোকানের কথা বললে তো হবে না। এছাড়া, পেঁয়াজ ও আলুর দর নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা মোকাম ও হিমাগারে অভিযান চালাচ্ছি। ফরিদপুরে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় আনতে পারলে খুচরা বাজারে তা ৬৫ টাকায় পাওয়া যাবে।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘হিমাগারে আলু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র আছে। এই চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদের পক্ষে এই চক্রকে ধরা অনেক কঠিন। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি এই চক্র ভাঙতে।
প্রকাশিত শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩