আকবর শাহ'য় জাল দলিলে পাহাড় দখল করে বিক্রির অভিযোগ জাহেদ গং এর বিরুদ্ধে
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর আকবর শাহ থানার ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিভিন্ন সময় পাহাড় ধস, পাহাড় কাটা দাঙ্গা হামলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সব সময় আলোচনার তুঙ্গে থাকা একটি ওয়ার্ড। এলাকাটি যেমন জনবহুল, তেমনি অধিকাংশ প্রায় পাহাড়ী ভূমি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা ও রয়েছে অল্প দামের পাহাড়ের ভূমি।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারী শত শত একর খাস ভূমি পাহাড় দখল করে, রাতের আধারে পাহাড় কেটে ছোট ছোট প্লট করে এসব মানুষের কাছে দখলসত্ব মূলে বিক্রি করে দিচ্ছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা।
এতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি গড়ে উঠছে মাদকের আখড়া। এমনই একজন শাহাবুদ্দিন প্রকাশ ভূমি জাহেদ। তথ্য পাওয়া যায়, জাল দলিল তৈরি করে যুগ যুগ ধরে সরকারী খাস পাহাড়ী টিলা দখল করে একাধারে পাহাড় কেটে দখলসত্ব প্লট বিক্রি করে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে পাহাড় কেটে বিক্রি করে এলেও মূল চক্রটি রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। আওয়ামিলীগ এর নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ভূমি জাহেদের সহযোগী হিসেবে থানা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ,
ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সরোয়ার মোর্শেদ কচি, ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ মামুন এর নাম।
সূত্র বলছে জাহেদের পাহাড় বিক্রির ভাগ চলে যায় তাদের কাছে। কোন প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও কিভাবে বিলাসী জীবন যাপন করছেন তারা এমনই প্রশ্ন অনেকের মনে। কাজী আলতাফের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বাস্তুহারা সমিতি গঠন করে গরিব অসহায় বানভাসী মানুষ'কে আশ্রয়ন করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা।
এসব টাকা নেয়ার কিছু রশিদ এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে।
ভূমিদস্যু জাহেদের দখলে এখনো রয়েছে বি.এস ১নং খাস খতিয়ানে বি.এস ১৫০,২১৪ দাগে প্রায় ৯ একর ২৩ শতক সমপরিমান পাহাড়। জাহেদের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারত্বের মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে জাহেদ।
শুধু মামলা নয় একাধিক বার উচ্ছেদ অভিযানের নোটিশ দিলেও তোয়াক্কা করছেনা জাহেদ। ২০১১ সালে ১৭ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ এর নোটিশ প্রেরণ করে জেলা প্রশাসন। এতে কোন লাভ হয় নি। দলের প্রভাব খাটিয়ে সরকারী এসব জায়গা এখানো দখল করে পাহাড় কেটে বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে।
বছর কয়েক আগেও একাধিক ব্যক্তির কাছে দখলসত্ব সরকারী খাস জায়গা বিক্রির নথি পাওয়া গেছে। তথ্য বলছে ১৯৬৮ সালে ১৫০,১৫২,১১৪,৭৬৫ দাগের ১৫ একর ৩৯ শতক পাহাড় জাল পাট্টা অরেজিষ্ট্রী দলিল তৈরী করে। সেই জাল দলিল থেকে ৫ ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬০ সালে একটি দান পত্র দলিল তৈরী করে সরকারি সম্পত্তি দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ছোট ছোট প্লট করে ছিন্নমূলের মত গরীব মানুষের কাছে দখলসত্বে বিক্রি করে দেয়। সরকারী এইসব সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি উচ্ছেদ মামলাও রজু হয়। যার মামলা নম্বর ২/২০১১।
মামলায় উক্ত সম্পত্তি সরকারের পক্ষে রায় হয়। এরপর জমির আহম্মদ, শাহাবুদ্দিন (ভূমি জাহেদ),আব্দুল গণি, মো. ওসমান, মনির আহম্মদ,মো. আরিফ, মিজানুর রহমান,মো. ইয়াছিন, মো.ইসমাইল,জসিম উদ্দিনের নামে ১৭/১০/২০১১ সালে একটি উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে সরকারি আদেশ'কে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে এখনো দখল রয়েছে তারা। এখনো পাহাড় কেটে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যার ফলে সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। এবিষয়ে জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন জাহেদ বলেন, আমার নামে যে অভিযোগ উঠেছে সব মিথ্যা। এগুলা আমাদের মুর্শিদি সম্পত্তি। এই যায়গার নামে এখন কোন মামলা নেই, সব নিঃপত্তি হয়ে গেছে। তাইএখন বেচা বিক্রিতে কোন বাধা নেই। এবিষয়ে থানা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে আরো তথ্য আসছে পরবর্তী প্রতিবেদনে।
প্রকাশিত শনিবার ১৫ এপ্রিল ২০২৩