৫১ মাসের বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেনা, হত্যার হুমকি যুবলীগ নেতা
বাসাভাড়ার টাকা চাওয়ায় মালিককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা শামীম ইকবালের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাড়ির মালিক নেহারুন বিবি (৬০) এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর কাছে ৫১ মাসের ভাড়া বাকী। এদিকে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন শামীম ইকবাল।
তিনি বলেছেন, ‘ মালিক ভাড়া না নেওয়ায় আদালতে ভাড়ার টাকা দিচ্ছেন তিনি।’ শামীম ইকবাল সিলেট নগরের উপশহর এলাকার মৃত রফিক মাস্টারের ছেলে। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া জেলা যুবলীগের সদস্য ছিলেন তিনি। বর্তমানে নিজেকে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দেন শামীম। এদিকে ভুক্তভোগী নেহারুন বিবি নগরের উপশহর ডি ব্লকের ২৬ নং বাসার আব্দুল হাই সাজ্জাদের স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বাড়ির মালিক নেহারুন বিবি লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাসার ভাড়াটে শামীম ইকবালের কারণে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিনি ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ আমার বাসার নিচতলা মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়া ধার্য করে বাংলাদেশ “অটিজম গবেষণা ও প্রতিবন্ধী স্কুল” সিলেট (বার্ডস) প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময়ে চুক্তি সম্পাদন সম্ভব না হওয়ায় পরে তা করতে তাগাদা দিলে তিনি নানা টালবাহানা ও সময়ক্ষেপন করেন। আমার ছেলে লন্ডন থেকে ৩ / ৪ বার চুক্তি করার জন্য দেশে এলেও শামীম নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেছেন। ভাড়া আদায় করতে না পারায় ২০২২ সালের নভেম্বরে আমি তাকে উকিল নোটিশ পাঠাই।
কিন্তু এতেও তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি।’ নেহারুন বিবি বলেন, ‘শুধু বাসা ভাড়াই নয়। ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে শামীম বিপদে পড়ে আমার কাছে ছুটে আসেন এবং ধার হিসাবে ৪০ হাজার টাকা চান। বকেয়া ভাড়াসহ ধারের টাকা এক সাথে পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ায় কিছুটা ভয়ে এবং সরল মনে বিশ্বাস করে আমি তাকে ৪০ হাজার টাকা দেই। পরে বারবার তারিখ দিলেও সে কোনো টাকাই ফেরত দেননি।
সালিস করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে নেহারুন বিবি বলেন, ‘বকেয়া আদায়ে আমি স্থানীয় মুরব্বিদের মাধ্যমে সালিস বিচারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধূর্ত শামীম কিছুতেই সালিস মানেন না। তাছাড়া আমাকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়ার দাবি করলেও সালিসানদের কাছে সে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।’ তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে উল্লেখ করে নেহারুন বিবি বলেন, ‘গত ২২ মার্চ আবার টাকা চাইতে গেলে শামীম আমাকে কাজের মেয়ে ও ছেলের সামনে গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেন। আমার বাসার কাজের মেয়ে তামান্নাকে দেখলে তিনি অশ্লীল কথাবার্তাও বলেন। এমনকি বাসার পাঁচতলার তাঁর প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকার ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটেও তিনি রাতযাপন করেন।
সেখানে আরও বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলেছেন অন্যান্য ভাড়াটেরা। এ ব্যাপারে আমি শাহপরান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।’ নেহারুন বিবি তার ৫১ মাসের বকেয়া ভাড়া আদায় এবং শামীমের প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ অটিজম গবেষণা ও প্রতিবন্ধী স্কুল’ সিলেটকে (বার্ডস) তাঁর বাসা থেকে সরিয়ে দিতে সিলেটের পুলিশ, প্রশাসন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতৃবৃন্দসহ সচেতন সিলেটবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামীম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘বাসাভাড়ার অগ্রিম বাবদ তাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। বাড়িওয়ালার ভাইসহ পাঁচজনের সামনে টাকা দিয়েছি। এখন তাঁর কাছে মোট ১৯ লাখ টাকা আমি পাব। ওই মহিলা চুক্তিপত্র দেন নাই। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নেহারুন বিবি ঘর ভাড়া না নেওয়ায় মামলা করেছি। এখন আদালতে নিয়মিত ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।