কৌশলে সম্পত্তি লিখে নিলেন দুই ভাই, বাড়িছাড়া বাবা-মা থানায়
সরকার অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা বলে বাবা-মাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে স্বাক্ষর নেন দুই ছেলে। বিষয়টি কিছুদিন পর জেনে জমি ফেরতের অনুরোধ করলেও শুনছেন না তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, জমি না দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ওই অভিযুক্ত দুই ছেলে। এরপর নিজের ভিটা ছেড়ে মেজ ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। উপায় না পেয়ে গতকাল সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাবা-মা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার টিকরামপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা হলেন ৯০ বছর বয়সী হামেসা বেগম ও তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ফহিমুদ্দিন। এই দম্পতির চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বাড়ি একই এলাকায় হলেও তাঁরা আলাদা জায়গায় বাড়ি করে থাকেন। অভিযুক্ত দুই ছেলে হলেন মো. আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় এই দম্পতি ৫৪ দশমিক ৬৬ শতক সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। সেই জমির কিছু অংশ সরকার অধিগ্রহণ করেছে জানিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার কথা বলে গত ২৩ নভেম্বর বৃদ্ধ বাবা-মাকে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যান দুই ছেলে মো. আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে নতুন দলিল তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর লিখে নেন তাঁরা। গত ২ ডিসেম্বর দুই ছেলের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা এর প্রতিবাদ করে সম্পত্তি ফেরত চাইলে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে আর ফেরত দেওয়া যাবে না বলে জানান অভিযুক্ত ছেলেরা। পরে জমির বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তাঁরা।
এদিকে বৃদ্ধ বয়সে থাকার একটু জমি না পেয়ে মেজ ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। দুই ছেলের এই প্রতারণা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অসুস্থ বৃদ্ধ মা-বাবা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃদ্ধা হামেসা বেগম বলেন, ‘আমার দুই সন্তান আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব প্রতারণা করে আমাদের ৫৪ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। আমাদের থাকার জায়গাটুকুও নেই। আমরা এখন রাস্তার ফকির। জমি ফেরতের জন্য অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা কথা শুনছে না। এ জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এখন বাধ্য হয়ে অন্য ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করে যাতে তারা (অভিযুক্তরা) যেন জমি ভোগদখল করতে না পারে, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রাকিবের ছেলে আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘জোর করে জমি লিখে নেননি। বিষয়টি আমাদের একান্ত পারিবারিক বিষয়। আমরা দেখব।’
এদিকে অভিযুক্ত আলিমুদ্দীন বলেন, ‘আমার বাবা-মা শেষ বয়সে আমাদের কাছে থাকতে চেয়েছিলেন। এ জন্য স্বেচ্ছায় আমাদের দুই ভাইয়ের নামে জমি লিখে দিয়েছেন। জোর করে জমি লিখে নিইনি। এখন অন্য ভাই-বোনদের প্ররোচনায় আমার নামে থানায় অভিযোগ করেছেন। এমনকি বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার খবরও সত্য না।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ‘দুই ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মা-বাবার জমি লিখে নেওয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে তিনি (ভুক্তভোগী) দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারবেন।
প্রকাশিত মঙ্গলবার ০৩ জানুয়ারি ২০২২