বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এমপির নাম ঘোষণা না করায় হট্টগোল
অনুষ্ঠানে এমপির নাম ঘোষণা না করায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হট্টগোল
টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এমপির নাম ঘোষণা না করায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ইউএনওর স্বাগত বক্তব্যে এবং অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সমাজসেবা কর্মকর্তার উপস্থাপনায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ঘোষণা না করায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে আখ্যায়িত করা হয়। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাসাইল উপজেলা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার স্বাগত বক্তব্যে প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের নাম ঘোষণা না করে বক্তব্য শেষ করেন। এরপর এমপির উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর-ই-লায়লা। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এ সময় সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে আখ্যায়িত করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।এছাড়া নেতাকর্মীরা সমাজসেবা কর্মকর্তার দিকে তেড়ে যান। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের চেষ্টা করেন। পরে ইউএনও দুঃখপ্রকাশ করায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন সংসদ সসদ্য।
হট্টগোলের সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, বাসাইল পৌর মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মতিয়ার রহমান গাউছ, সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুন্নাহার রিতা ও বাসাইল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
হট্টগোলের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান গাউছ বলেন, ‘বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের কার্ডে স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের নাম দেওয়া হয়নি। পরে অনুষ্ঠানে ইউএনও স্বাগত বক্তব্যে সংসদ সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নাম ঘোষণা করেননি। এরপর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তাও একইভাবে সংসদ সদস্যের নাম এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের নেতাকর্মীরা হট্টগোলের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য চলে যেতে চাইলে ইউএনও দুঃখপ্রকাশ করেন। তখন সংসদ সদস্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে চলে যান।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও তার বক্তব্যে আমার নাম বলেননি। সেটা কোনও সমস্যা না। আমাদের লোকজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সহ্য করতে পারেন না। দল থেকে বহিষ্কৃত কাজী অলিদ আগে বক্তব্য দেবেন এরপর প্রধান অতিথি (আমি) বক্তব্য দেবেন, তা মানতে পারেননি আমাদের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, এমপি আগে বক্তব্য দেবেন। এরপরও তারা শোনেননি। এ নিয়ে তাদের ধমক দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ইউএনও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এর বাইরে নেতাকর্মীরা কোনও বিশৃঙ্খলা করেননি। অনুষ্ঠানেও কোনও বিঘ্ন ঘটেনি।’
সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াতের লোক বলার বিষয়ে এমপি বলেন, ‘ওই কথা বিচ্ছিন্নভাবে কেউ বলতে পারেন। তা আমার কানে আসেনি।’
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর-ই-লায়লার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘এটা তেমন কোনও ঝামেলা না। এমপির সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয়েছে। এমপি মহোদয় অনুষ্ঠানে সালাম গ্রহণ করেছেন, পরে অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। অনুষ্ঠানে এমপি মহোদয়ের নাম বলা হয়েছে।’
সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াতের লোক বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখবো।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বাসাইল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইউএনও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। পরে সমাধান হয়ে গেছে।
প্রকাশিত শুক্রবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২২