ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বুয়েটছাত্র ফারদিন: ডিবি প্রধান
বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশ তারাবো বিশ্বরোডের সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিন্টোরোডের ডিএমপির ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন ঘটনার দিন রাত ৯টার পরে বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে চলে যান। এরপর তিনি কেরানীগঞ্জ চলে যান সেখানে থেকে আবার পুরান ঢাকার জনসন রোড আসেন। সেখান থেকে গুলিস্তার, এরপর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। সেখান থেকে লেগুনায় উঠে তারাবো বিশ্বরোড চলে যায়। সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর নেমে তিনি পায়ে হেটে আসেন। সেখান থেকে রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে ঝাপ দেন। যা ব্রিজের সিসি ক্যামেরায় ধরা পরেছে।’
কেন আত্মহত্যা করলো ফারদিন
ডিবি পুলিশ আত্মহত্যার বিষয়ে প্রাথমিক ৯টি কারণ ও যৌক্তিকতার কথা উল্লেখ করেছেন। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মূখী ছিলেন। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতেন না।’
বুয়েটে তার রেজাল্ট ক্রমাগতভাবে খারাব হচ্ছিল বলে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘ফারদিনের রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, প্রথম সেমিস্টারে তার সিজিপিএ ৩.১৫ ছিল সর্বশেষ তাঁর রেজাল্ট ছিল ২.৬৭ পয়েন্ট। যেটা তাঁর পরিবার ও আত্মীয় স্বজন জানতেন না। এটা নিয়ে তাঁর মনখারাপ ছিল।’
এছাড়াও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্পেনে যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকার প্রয়োজ ছিল, তাঁর বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেন। বাকি টাকা ম্যানেজ না হওয়াতেও তাঁর হতাশা ছিল বলে দাবি করেছে ডিবি। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন চারটি টিউশনি করতেন। টিউশনির টাকা দিয়ে তিনি দুই ভাইয়ের লেখাপড়া খরচ চালাতেন, সংসারেও
দিতেন। এসব নিয়ে ফারদিন মানসিকভাবে ডিস্টার্ব ছিলেন। প্রথমে তিনি বাবু বাজার ব্রিজে গিয়েছিলেন ঝাপ দিতে। তবে তিনি তাঁর নিজের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে ফিরে আসেন। এরপর তিনি সুলতানা কামাল ব্রিজে গিয়ে ঝাপ দেন। আমরা ব্রিঝ থেকে ঝাপ দেওয়ার একটি শব্দ ও নদীর ঢেউ দেখতে পাই ওই সময় তাঁর মোবাইল লোকেশনও সেখানে ছিল। তাই আপত দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয়েছে এটি আত্মহত্যা।’
ফারদিন চনপাড়া যাননি
ফারদিন চনপাড়া যাননি উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘৫২২ জনের সঙ্গে তাঁর কথোপকথোনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তার কারোর অবস্থান ব্রিজের উপর ছিল না। কেবল ফারদিন ছিলেন সেখানে।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর উদাহরণ দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর নগরের এক শিক্ষার্থী কয়েক বছর আগে সারাদিন বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে এভাবে দিনব্যাপী ঘোরাফেরা করে আত্মহত্যা করেছিলেন।’
ফারদিন ঘটনার রাতে অপর এক বান্ধবীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন, তাকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘ফারদিন হতাশাগ্রস্থ ছিলেন।’
ফারদিন আত্মহত্যা কেন মনে হলো এর অন্যতম আরো দুটি কারণ বলেছে ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, ‘ফারদিনের গায়ে থাকা শার্ট ও প্যান্ট স্বাভাবিক ছিল। শার্টের একটা বোতামও খোলা ছিল না। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্টে চিকিৎক প্রথমিকভাবে মাথায় যে আঘাতের কথা বলা হয়েছে তা সামান্য ছোপছোপ। তাতে তাঁর মৃত্যু হতে পারে না। সেই আঘাত মৃত্যুর পরেও হতে পারে।’
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। এ বিষয়ে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তাছাড়া পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও কোনো আঘাতের কথাও বলা নেই বলেও জানান তিনি।
বুয়েটের প্রতিবাদের ডাক
এদিকে ডিবি পুলিশের এই আত্মহত্যার দাবি প্রত্যাখান করেছে বুয়েট। তারা বৃহস্পতিবার সকালে ফারদিন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফারদিন নূর পরশের হত্যাকান্ডের তদন্তে উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বুয়েট শহীদ মিনারে ব্রিফিং ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রকাশিত বুধবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২২
আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিন্টোরোডের ডিএমপির ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন ঘটনার দিন রাত ৯টার পরে বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে চলে যান। এরপর তিনি কেরানীগঞ্জ চলে যান সেখানে থেকে আবার পুরান ঢাকার জনসন রোড আসেন। সেখান থেকে গুলিস্তার, এরপর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। সেখান থেকে লেগুনায় উঠে তারাবো বিশ্বরোড চলে যায়। সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর নেমে তিনি পায়ে হেটে আসেন। সেখান থেকে রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে ঝাপ দেন। যা ব্রিজের সিসি ক্যামেরায় ধরা পরেছে।’
কেন আত্মহত্যা করলো ফারদিন
ডিবি পুলিশ আত্মহত্যার বিষয়ে প্রাথমিক ৯টি কারণ ও যৌক্তিকতার কথা উল্লেখ করেছেন। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মূখী ছিলেন। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতেন না।’
বুয়েটে তার রেজাল্ট ক্রমাগতভাবে খারাব হচ্ছিল বলে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘ফারদিনের রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, প্রথম সেমিস্টারে তার সিজিপিএ ৩.১৫ ছিল সর্বশেষ তাঁর রেজাল্ট ছিল ২.৬৭ পয়েন্ট। যেটা তাঁর পরিবার ও আত্মীয় স্বজন জানতেন না। এটা নিয়ে তাঁর মনখারাপ ছিল।’
এছাড়াও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্পেনে যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকার প্রয়োজ ছিল, তাঁর বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেন। বাকি টাকা ম্যানেজ না হওয়াতেও তাঁর হতাশা ছিল বলে দাবি করেছে ডিবি। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিন চারটি টিউশনি করতেন। টিউশনির টাকা দিয়ে তিনি দুই ভাইয়ের লেখাপড়া খরচ চালাতেন, সংসারেও
দিতেন। এসব নিয়ে ফারদিন মানসিকভাবে ডিস্টার্ব ছিলেন। প্রথমে তিনি বাবু বাজার ব্রিজে গিয়েছিলেন ঝাপ দিতে। তবে তিনি তাঁর নিজের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে ফিরে আসেন। এরপর তিনি সুলতানা কামাল ব্রিজে গিয়ে ঝাপ দেন। আমরা ব্রিঝ থেকে ঝাপ দেওয়ার একটি শব্দ ও নদীর ঢেউ দেখতে পাই ওই সময় তাঁর মোবাইল লোকেশনও সেখানে ছিল। তাই আপত দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয়েছে এটি আত্মহত্যা।’
ফারদিন চনপাড়া যাননি
ফারদিন চনপাড়া যাননি উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘৫২২ জনের সঙ্গে তাঁর কথোপকথোনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তার কারোর অবস্থান ব্রিজের উপর ছিল না। কেবল ফারদিন ছিলেন সেখানে।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর উদাহরণ দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর নগরের এক শিক্ষার্থী কয়েক বছর আগে সারাদিন বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে এভাবে দিনব্যাপী ঘোরাফেরা করে আত্মহত্যা করেছিলেন।’
ফারদিন ঘটনার রাতে অপর এক বান্ধবীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন, তাকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘ফারদিন হতাশাগ্রস্থ ছিলেন।’
ফারদিন আত্মহত্যা কেন মনে হলো এর অন্যতম আরো দুটি কারণ বলেছে ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, ‘ফারদিনের গায়ে থাকা শার্ট ও প্যান্ট স্বাভাবিক ছিল। শার্টের একটা বোতামও খোলা ছিল না। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্টে চিকিৎক প্রথমিকভাবে মাথায় যে আঘাতের কথা বলা হয়েছে তা সামান্য ছোপছোপ। তাতে তাঁর মৃত্যু হতে পারে না। সেই আঘাত মৃত্যুর পরেও হতে পারে।’
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। এ বিষয়ে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তাছাড়া পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও কোনো আঘাতের কথাও বলা নেই বলেও জানান তিনি।
বুয়েটের প্রতিবাদের ডাক
এদিকে ডিবি পুলিশের এই আত্মহত্যার দাবি প্রত্যাখান করেছে বুয়েট। তারা বৃহস্পতিবার সকালে ফারদিন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফারদিন নূর পরশের হত্যাকান্ডের তদন্তে উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বুয়েট শহীদ মিনারে ব্রিফিং ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রকাশিত বুধবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২২