চট্টগ্রামে তিনশত বছরের প্রাচীন সমাধি...
হ্যারি পটারের সেই প্ল্যাটফর্ম নাইন অ্যান্ড থ্রি কোয়ার্টারের কথা মনে আছে? কিংস ক্রসের মতো ব্যস্ত রেলস্টেশনের ভিতরে পুরাই আলাদা জাদুবাস্তবতার একটা জগত! কিছুটা তেমনটাই অনুভূত হলো আজ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে ষোলশহর রেললাইনের পাশেই স্বল্প পরিচিত এক প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র।
১৭০০ শতকে পর্তুগিজদের স্থাপিত প্রোটেস্টেন্ট সিমেট্রিটিতে কয়েকশো বছরের ভাঙ্গাগড়ায় সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি খুঁজে পেলাম ১৭৭৪ সালের। জেমস রসের স্ত্রী হানাহ রস, যিনি মাত্র উনিশ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন! সমাধিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আছে গর্ভনর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস-এর বন্ধু চট্টগ্রামের চিফ কালেক্টর চার্লস ক্রফটস এর দৃষ্টিনন্দন সমাধি, যিনি ১৭৮৬ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
তৎকালীন সময়ের পাদ্রী, টি-প্ল্যান্টার্স, নাবিক, সিভিল সার্জন, ব্যবসায়ী, রেল, সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি ও তাদের পরিবার-পরিজনদের সমাধি শত শত বছর ধরে শান্ত এক আপাত নিরুপদ্রব পরিবেশে রয়ে আছে ফরেস্ট হিলের পাদদেশে!
পলাশীর প্রান্তরের আগে থেকে শুরু করে সিপাহী বিদ্রোহ, দুই-দুইটি বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ, আমাদের স্বাধীনতা- ইতিহাসের পাতা যেনো থমকে আছে এখানে!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে সন্নিহিত অঞ্চলে নিহত সৈনিকদের সমাহিত করা হয়েছিলো এখানেই, পরে তাদের দেহাবশেষ ওয়ার সিমেট্রিতে স্থানান্তর করা হয়।
প্রিয়জনদের স্মরণে উৎসর্গকৃত মহার্ঘ্য মার্বেল পাথরের এপিটাফগুলো চুরি হয়ে গেছে বহু আগেই, প্রতিস্থাপিত নামফলক যা চোখে পড়লো তা খুব একটা পুরনো না!
এখনো ব্যবহৃত এই সমাধিক্ষেত্রের একপাশে ব্যাপ্টিস্টদের জন্য আলাদা জায়গা থাকলেও তার পৃথক প্রবেশপথটি দখলদারদের কারণে রুদ্র আজ। অধুনা ভূমিদস্যুদের করাল গ্রাস থেকে যা রক্ষা পেয়েছে তাও চট্টগ্রামের ইতিহাসের মণিমুক্তা বৈ কম কিছু নয়।
এই সমাধিক্ষেত্রের অন্তত সীমানা প্রাচীরের আশু সংস্কার আমাদের সমৃদ্ধশালী অতীত সংরক্ষণে কিছুটা দায়মুক্তি দিতে পারে!