শান্তিরক্ষী জাহাংগীরের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা, অঝোরে কাঁদছেন স্ত্রী
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় বোমা বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সৈনিক জাহাংগীর আলমের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লতিফুর রহমান। মা গোলেনুর বেগম মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। জাহাংগীরের ছবি নিয়ে আহাজারি করছেন স্ত্রী শিমু আক্তার।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) রাতে জাহাংগীরের নীলফামারীর ডিমলা থানার দক্ষিণ টিটপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। জাহাংগীর ওই গ্রামের লতিফুর রহমানে ছেলে। লতিফুর রহমানের পাঁচ ছেলের মধ্যে জাহাংগীর চতুর্থ। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সন্তানের জন্য আহাজারি করছেন জাহাংগীরের বাবা-মা। বাড়ির উঠানে বসে অঝোরে কাঁদছেন জাহাংগীরের স্ত্রী শিমু আক্তার। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। স্বজনদের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো গ্রামে। প্রতিবেশীরা ওই বাড়িতে ভিড় করেছেন। এ সময় অনেকের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছিল। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা ছিল না কারও।
বিলাপ করতে করতে জাহাংগীরের মা গোলেনুর বেগম বলছিলেন, 'মোর যাদু চাকরি করি আর বাড়িত আসবে না। রোজার ঈদে বাড়িত আসিবার কথা ছিল। তার আগেই লাশ হইলো। এলা কষ্ট মুই কেমন করি সইমু। বিয়া হবার কয়খান মাস হইলো, তাতে মোর বাবাটাক আল্লাহ কাড়ি নিলো। মোর বাবাটাকে আইনা দাও।'
জাহাংগীরের বাকরুদ্ধ বাবা বিছানায় কাতর হয়ে পড়ে আছেন। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল তার। এর মধ্যে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও কারও সঙ্গে কোনও কথা বলেননি লতিফুর রহমান।
স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। কেঁদে কেঁদে বারবার বলছিলেন, 'বলেছিল এবার ঈদে বাড়ি আসবে, আর আইলো না। লাশ হয়ে ফিরলো।'
জাহাংগীর আলমের বড় ভাই সেনাসদস্য আবুজার রহমান বলেন, '২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় জাহাঙ্গীর। এক বছর আগে বাড়িতে এসে বিয়ে করেছিল। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যায়। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিম সেক্টরের বোয়ার এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের (ব্যানব্যাট-৮) সঙ্গে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল জাহাংগীর। দেশটির স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর টহল থেকে ফেরার সময় পথে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে বহরের প্রথম গাড়িটি আক্রান্ত হয়, সেটি ছিটকে ১৫ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। এতে আমার ভাইসহ তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারায় এবং একজন আহত হন। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের ফোন করে জাহাংগীরের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কাঁদছেন পরিবারের সদস্যরা।'
জাহাংগীর আলমের আরেক ভাই মো. বাদশা বলেন, 'ভাইকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। শেষবারের মতো ভাইকে দেখতে চাই আমরা।'
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর টহল থেকে ফেরার সময় পথে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন।
প্রকাশিত বুধবার ০৫ অক্টোবর ২০২২