কৃত্রিম হাতের আড়ালে অভিনব ইয়াবা ব্যবসা
চার বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক হাত অকেজো হয়ে যায় রানা হাওলাদারের (২৬)। তারপর চিকিৎসার প্রয়োজনে কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। সেই অংশে কৃত্রিম হাত লাগিয়ে অভিনব এক কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার পুলিশ। এ সময় নকল হাতের আড়ালে লুকিয়ে রাখা ১৫৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
আজিমুল হক জানান, রাজধানীর জনবহুল বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের ভিড়ের মধ্যে অভিনব কায়দায় মাদক পরিবহন ও হাতবদল করত একটি চক্র। সেই চক্রের একজন সদস্য রানা হাওলাদার। তিনি নিজের হাতের কনুইয়ের নিচের কৃত্রিম হাতের আড়ালে ইয়াবা বহন করতেন।
গত সাত-আট বছর ধরেই তিনি এমন অভিনব কায়দার মাদকের কারবার করে আসছিলেন বলে জানান আজিমুল হক। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর চার বছর ধরে বাম হাতের কনুইয়ের নিচে সংযুক্ত প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাতকেই ইয়াবা বহনের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন রানা হাওলাদার।’
ডিসি আজিমুল হক আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানার একটি দল পশ্চিম রামপুরার উমর আলী লেন এলাকা থেকে রানা হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রানা হাওলাদারের বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলেন চিকিৎসক। পঙ্গু রানার দৃশ্যমান পেশা অটোরিকশাচালক। তবে এর আড়ালে বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচে সংযুক্ত প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাতের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় বিশেষ কায়দায় তিনি ইয়াবা পরিবহন করতেন। মূলত অটোরিকশা চালিয়েই তিনি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাত্রী আনা-নেওয়ার পাশাপাশি ইয়াবা সরবরাহ করতেন।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক আরও বলেন, রানা হাওলাদার বেশ কিছুদিন ধরে মিরপুর এলাকায় থাকেন। সাত দিন আগে তিনি বিয়ে করেছেন। এটা তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রী তাঁকে তালাক দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি মিরপুর থেকে বাসযোগে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। রামপুরা এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে তাঁর স্ত্রীকে বসতে বলে ইয়াবা ডেলিভারি দিতে গিয়ে হাতিরঝিল থানার পুলিশের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তার রানা হাওলাদারের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের সখীপুর থানায় দুটি মাদক মামলাসহ মোট তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আজিমুল হক জানান, রানা হাওলাদার যাকে ইয়াবা দিতে গিয়েছিলেন এবং যার কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করেন, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ধরনের মাদক হাত বদল চক্রের আরও সদস্য রয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডিসি বলেন, নিঃসন্দেহে রানা হাওলাদার একা নন। আরও অনেকে আছে। আমরা একজনকে ধরে শুরু করেছি। আমাদের কাছে তথ্যটি অনেক দিন ধরেই ছিল। আমরা কাজ করছি। এর সঙ্গে আরও অনেক লোক জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। গ্রেপ্তারকৃতকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিনি সাত-আট বছর ধরে এ কাজ করছেন। আগে শরীয়তপুরে করলেও গত তিন-চার বছর ধরে ঢাকায় করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সবারই একটি সহানুভূতিশীল দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু তারা এটি কাজে লাগিয়ে এ ধরনের অপরাধ করছে এবং এটা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিশেষ করে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মাদক হাত বদল করে। ছোট মাদক হওয়ায় ভিক্ষা বা হ্যান্ডশেক করার ছলে মাদক হাতবদল করে। এরা মূলত খুচরা বিক্রেতা।
হাত কীভাবে হারিয়েছে জানতে চাইলে আসামির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি আমাদের জানিয়েছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতটি পুড়ে গেছে। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে কাটা হয়েছে।’
এই চক্রের পেছনে কারা জড়িত জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘তারা কাটাউট পদ্ধতিতে মাদক হাতবদল করত। তারা একে অন্যকে চেনে না। তাদের শনাক্ত করা কঠিন। এর আগেও আমরা অনেক চক্র ধরেছি। আমরা চেষ্টা করছি চক্রের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে।’
সাদা ইয়াবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিভিন্ন ডায়মেনশন থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন সাদা মাদক তৈরি করছে। কেমোফ্লেক্স করতেই তারা এটি করছে। যারা এটার প্রতি আসক্ত, তাদের কাছে নতুনত্ব আনার জন্যই এটা করা হচ্ছে।’
প্রকাশিত বুধবার ২৬ অক্টোবর ২০২২