• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    বেপরোয়া বাস চালাতে উদ্বুদ্ধ করে ভিডিও ধারণ, বন্ধে আইনি নোটিশ

     

    দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের রেষারেষি কিংবা ‘বাউলি বাজির’ বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভিডিওতে রীতিমতো ধারাভাষ্যও বসানো থাকে, ভিউ হয় লাখ লাখ। আর এই ‘ভিউ’-এর জন্যই কিছু ফেসবুকার, ইউটিউবার ও টিকটকার সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালককে বেপরোয়া গাড়ি চালনায় উৎসাহ দেন। এমন অভিযোগ তুলে চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর উৎসাহ দেওয়া ও উদ্ধুব্ধ করা থেকে বিরত রাখতে এবং সেসব ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধের নির্দেশনা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

    সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব, বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতিকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।


    একইসঙ্গে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলার্স, গ্রিন লাইন পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস (প্রা.) লিমিটেড, এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন (প্রা.) লিমিটেড, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, গোল্ডেন লাইন পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, সাকুরা পরিবহন (প্রা.) লিমিটেড এবং ইমাদ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কাউন্টার ম্যানেজারদের নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।


    শনিবার (৮ অক্টোবর) জনস্বার্থে ৯ আইনজীবীর পক্ষে নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মেহেদী হাসান। 

    নোটিশ প্রাদানকারী ৯ আইনজীবী হলেন- অ্যাডভোকেট এস. এম. জাবিরুল হক (কাজল), মো. মেহেদী হাসান, আদলু সাইন, এইচ. এম. রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, মুশফিকুর রহমান সেতু, মো. হুমায়ুন কবির সরকার, আবু তাহের রনি, মো. ওবায়দুল্লাহ কাজী ও মো. মিলন হোসেন।

    নোটিশে পরিবহন মালিক উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ‘সড়ক ও মহাসড়কে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের বাস ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহন যাত্রী সেবায় নিয়োজিত রেখে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোতে চালকরা বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী পঙ্গু হওয়াসহ নিহত পর্যন্ত হয়েছেন। এতে আপনাদের পরিবহনগুলোরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

    বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনা ও উৎসাহ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় নোটিশে। এতে আরও বলা হয়, ‘এই মহলটির অধিকাংশ ব্যক্তি ফেসবুক ও টিকটক ব্যবহার করেন। এই সব ব্যক্তি ফেসবুক ও টিকটক ছাড়াও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট বা চ্যানেল খুলে চালকদের দ্রুত গতির ভিডিও প্রকাশ করে। তারা গাড়ি চালানোর সময় উৎসাহ প্রদান করে। আবার সেসব দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুক গ্রুপ-পেইজে এবং টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে।‘

    ফেসবুকার ও টিকটকাররা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাস চালকদের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে চলেছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘গাড়ি চালানোর সময় ফেসবুকার ও টিকটকাররা চালকের পাশে বসে বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো সহ বাস চালকদের উসকে দিয়ে বারবার হর্ন বাজানো, ওভারটেকিং, বাউলি দেওয়া, গুটি দেওয়া, ডিপার লাইট দেওয়া, হার্ড ব্রেকিং করাসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন, যা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ, ইউটিউব ও টিকটকের ভিডিও ছবি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।’

    নোটিশে উদাহরণ হিসেবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার ভিডিওর (১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড) কথা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দী এলাকায় হানিফ পরিবহনের একজন চালক রাতে যাত্রীবাহী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এসময় চালকের পাশে থেকে কিছু ফেসবুকার ও টিকটকার চালককে বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর বিষয়ে উৎসাহিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে সামনে চলমান ট্রাকটিকে বাউলি বা ওভারটেক করতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় ট্রাকটি তৎক্ষণাৎ উল্টে যায়।’

    ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ‘ওই সময় হানিফ পরিবহনের পেছনে থাকা ইমাদ পরিবহনের বাস চালককেও ফেসবুকার ও টিকটকাররা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করতে থাকে, যা ভিডিওতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এসব কর্মকাণ্ড সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-সহ প্রচলিত আইন বিরোধী।’

    দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও বাস পরিবহন সমূহের ক্ষয়-ক্ষতি রোধকল্পে আইনি নোটিশে বেশ কয়েকটি মতামতও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘গাড়ির গতিসীমা সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাখার জন্য প্রতিটি বাসে ডিজিটাল স্পিড মিটার বা অ্যাপ স্থাপন করা প্রয়োজন।

    সেই সঙ্গে চালকের পাশে ইঞ্জিন কাভারের উপরে কোন যাত্রীসহ ফেসবুকার ও টিকটকার যেন ভিডিও করতে না পারে, বসতে না পারে এবং ড্রাইভারকে গাড়ি চালানোকালীন সময়ে প্ররোচিত করতে না পারে, সেই মর্মে সহজে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করারও সুপারিশ করা হয়।

    নোটিশে যাত্রীদের জীবন, মাল ও সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে টিকিট ও নির্দিষ্ট কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী ওঠানামা নিষিদ্ধ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।

    নোটিশটি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মতামতগুলো প্রতিপালন এবং স্ব-স্ব বাস কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবহনের চালকের প্রতি গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নোটিশ ইস্যুর করা জন্য জনস্বার্থে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নোটিশের অনুরোধগুলো যথাযথভাবে পালনপূর্বক বিষয়টি নোটিশদাতাদের জানাতেও বলা হয়েছে।

    অন্যথায় ভবিষ্যতে যেকোন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

    প্রকাশিত শনিবার ৮ অক্টোবর ২০২২