মৃত্যুর ৯ মাস পর দুর্নীতির মামলায় সাড়ে ৭ বছর কারাদণ্ড
পটিয়ার আবুল বশর চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৯ মাস আগে। কিন্তু তা জানানো হয়নি আদালতকে।
ফলে মৃত্যুর ৯ মাস পর দুর্নীতির মামলায় মৃত আবুল বশরকেই সাড়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত এই রায় দেন। ৯ মাস আগে মৃত্যু হলেও আদালতকে বিষয়টি অবগত না করায় ঘটেছে এমন ঘটনা।
আবুল বশর চৌধুরী, পটিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড গোবিন্দের খিল এলাকার মৃত আব্দুর রশিদ চৌধুরীর ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক নিরাপত্তা পরিদর্শক ছিলেন।
আবুল বশরের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে বাংলানিউজ যোগাযোগ করে পটিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মৃত্যুর বিষয়টি সত্য বলে জানান।
শেখ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা আবুল বশর চৌধুরী মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি পটিয়া পৌর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। হাদু চৌধুরী জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পটিয়া পৌর সভার ৯ নম্বর হাদু চৌধুরী জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা জামাল বলেন, আবুল বশর চৌধুরী ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের মসজিদের কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। আমি জানাজায় অংশ গ্রহণ করেছিলাম। কবরে তার জন্ম ও মৃত্যু তারিখ লেখা ফলকও রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আবুল বশর চৌধুরী দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৪২১ টাকা স্থাবর সম্পদ এবং ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৪১ টাকা অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। পরে তার দেওয়া সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৩ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পান দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।
এতে দেখা যায়, তিনি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৩২ টাকা স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়াও তিনি ৫৫ লাখ ১০ হাজার ১২৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নগরের ডবলমুরিং থানায় আবুল বশর চৌধুরীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে চট্টগ্রাম দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১। ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক এম এইচ রহমতউল্লাহ। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় মোট ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ৮ জনের সাক্ষী গ্রহণ করেন। আবুল বশর চৌধুরী মামলায় সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, দুদকের মামলায় আবুল বশর চৌধুরী আদালতে মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতেন। শেষের দিকে তিনি মামলায় হাজিরা দেয়নি। উনার মৃত্যুর বিষয়ে আইনজীবী ও পরিবার কেউ আদালতকে অবগত করেনি।
তিনি আরও বলেন, দুদকের তথ্য বিবরণীতে ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৩২ টাকা তথ্য গোপনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আবুল বশর চৌধুরীকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৫৯৪ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা দোষী সাব্যস্থ্য করে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
আবুল বশর চৌধুরীর আইনজীবী রতন চক্রবর্তী বলেন, আবুল বশর চৌধুরী অসুস্থ ছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তখন আবুল বশর চৌধুরী অসুস্থ থাকার বিষয়টি আদালতের নজরে এনে ছিলাম। আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম মামলাটা যাতে দ্রুত শেষ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আবুল বশর চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়েছিল। যোগযোগ করতে না পেরে মামলায় আদালতে সময়ের আবেদন দেওয়া হয়েছিল গত জানুয়ারি মাসে। তিনি কি বেঁচে আছে না মৃত্যুবরণ করেছেন আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মৃত্যুবরণ যদি করে থাকে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হলে আদালতকে অবগত করতাম।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মূসা বলেন, আবুল বশর চৌধুরী সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে মামলায় আবুল বশর চৌধুরী আইনজীবী সময়ের আবেদন দেন কয়েকবার। সর্বশেষ গত ১৬ মে আবুল বশর চৌধুরী বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেটা পটিয়া থানায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবুল বশর চৌধুরী মৃত্যুর বিষয়টি অফিসিয়ালি আদালত এখনো অবগত নয়। যদি আবুল বশর চৌধুরী মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবগত করতেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতো। রায়ের পরে পটিয়ার এক বাসিন্দা আবুল বশর চৌধুরী মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে।
প্রকাশিত মঙ্গলবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২