বাঁশখালীর দুর্গম এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান১০টি অস্ত্রসহ কারিগর জাকির কে গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম র্যাব-৭, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বাঁশখালী থানাধীন জনৈক আব্দুর রহমানের টিনের দোচালা ঘরে অবৈধ দেশীয় অস্ত্র তৈরী করে ক্রয় বিক্রয় করছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ আগষ্ট , আনুমানিক সময় ২:৪০ মিনিটে র্যাবের অভিযানে আসামী জাকেরুল্লাহ (৫০), পিতা- মৌলভী নুরুল হুদা, সাং- জঙ্গল চাম্বল, থানা- বাঁশখালী, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে বর্ণিত টিনের দোচালা ঘরের ভিতর সাদা প্লাষ্টিকের বস্তা হতে দেশীয় তৈরী ০৮ টি ওয়ান শুটারগান, ০২ টি টু-টু পিস্তুল এবং অস্ত্র তৈরীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর নিকট তথ্য ছিল কতিপয় ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জংগল চাম্বল এলাকায় অস্ত্রের কারখানা স্থাপন করে স্থানীয় জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী এবং ডাকাত দলের সদস্যদের নিকট বিক্রয় করে আসছে।
দূর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই এই অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যগন সতর্ক হয়ে যেত ফলে তাদের অবস্থান সনাক্তকরন ছিল একটি কঠিন বিষয়।
কিন্তু, র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর চৌকষ আভিযানিক দলের গোয়েন্দা তৎপরতায় ও পাহাড়ি এলাকার ভিতর দিয়ে বিশেষ কৌশলে এলাকায় প্রবেশ করায় এই চক্রের সদস্যরা টের পায়নি। অতঃপর কারখানার অবস্থান নিশ্চিত হলে সেখানে র্যাব-৭ এর অধিনায়কের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে এবং একটি টিনের বাড়ি থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ ১০টি প্রস্তুতকৃত অস্ত্রসহ একজন মূল কারিগরকে আটক করতে সক্ষম হয়।
আটককৃত জাকিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কাজের সাথে জড়িত। ১টি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ক্যাটাগরীভেদে ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য ধরে থাকেন এবং ছোট ওয়ানশুটার গান জাতীয় অস্ত্র প্রস্তুত করতে ৫-৬ দিন সময় নিয়ে থাকে। তবে স্থানীয় সূত্রমতে ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আটককৃত জাকির ৭-৮ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। সে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মাঝে লোক দেখানো কৃষি কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির আরো জানায় তারা মূলত ২জন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরি সম্পুর্ণ কাজটি করতো। অস্ত্রের প্রকারভেদে তাদের ন্যুনতম ৫-১৫ দিন সময় লাগতো একটি অস্ত্র প্রস্তুত করতে। অস্ত্র তৈরির কাচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে এই ভাড়া করা বাড়িটিতে নিয়ে এসে কাজ করতো।
প্রধান কাচামাল হিসেবে বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা তারা ক্রয় করতো। পরবর্তীতে, তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল। একটি অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুরি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাদিই র্যাব-৭ কারখানাটি থেকে উদ্ধার করে। যন্ত্রসমূহ পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে তারা তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে আসতো।
গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্র সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্্যাব-৭ এর অধিনায়ক এইচ,এম ইউসুফ বুধবার এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন।