উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নেত্রীর ৭৬ তম জন্মদিন আজ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ার গ্রামীণ পরিবেশে। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সংস্পর্শেই বেড়ে উঠেছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের ৪১ বছরই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিকূল সময়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির জন্মদিন আজ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে তাঁরা ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনের বাসিন্দা হন।
১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রসংসদের সহসভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বারবার কারাবন্দি হয়েছেন। কারাবন্দি পিতার আগ্রহেই ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে গৃহবন্দি থাকার সময় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর কন্যাসন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জন্মলাভ করেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে। এ সময় বিদেশে স্বামীর কর্মস্থলে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। পিতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হারিয়ে ভারতে আশ্রয় পান শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা।
১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিদেশে নির্বাসিত শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করায় মনোযোগী হন। একদিকে সামরিক শাসক, অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিবন্ধকতাকে সামাল দিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার রেকর্ড শেখ হাসিনার। তিনি এর মধ্যে ১৯ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন। এ সময় তিনি নিম্ন আয়ের বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব সাধন করেছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সাফল্যগাথা এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈর শাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাঁকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আজ বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের আয়োজনে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সকাল ১০টায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে (বাসাবো, সবুজবাগ) বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সকাল ৯টায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭/এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে আলোচনাসভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, সারা দেশের সব মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল পৃথক কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ। সংগঠন দুটির আয়োজনে পৃথক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।