স্ত্রীকে হত্যার পর পালিয়ে বিয়ে, অবশেষে গ্রেফতার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. উজ্জল প্রামাণিককে ১৬ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র্যাব-৩-এর সদস্যরা।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানন।উজ্জল বগুড়া সদর থানার কৈচড় দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক জানান, ২০০৬ সালের জুন মাসে আলো বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করে উজ্জল।
বিয়ের দিন উজ্জল ও তার পরিবার যৌতুক দাবি করে। ওই দিন আলোর বাবা আকবর আলী শেখ নগদ ৩০ হাজার টাকা দেন। বিয়ের এক মাস পর উজ্জল প্রামাণিক বিদেশ যাওয়ার জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হয়। সালিশে আকবর আলীকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ দেওয়া হয়। টাকা না দিলে আলোকে তালাক দেওয়ার ভয় দেখায় উজ্জল। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে।২০০৬ সালে ১ আগস্ট উজ্জলের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবু মোবাইল ফোনে আলোর স্বজনদের জানান, আলো গুরুতর অসুস্থ। খবর পেয়ে তার গিয়ে আলোর লাশ দেখতে পান।
এ ঘটনায় আলোর দুলাভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম বুলু বাদী হয়ে উজ্জল প্রামাণিককে প্রধান আসামি করে, তার মা আলেয়া বেওয়া, ভাই হিরা প্রামাণিক, বোন মোছা. লাভলী বেগম ও ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিট এবং শ্বাসরোধে হত্যার অপরাধে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুরো পরিবার আত্মগোপনে চলে যায়।২০২২ সালের ২৪ জুলাই বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১) আসামি উজ্জলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ ছাড়াও মামলার অভিযুক্ত অন্য চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেন।
হত্যাকাণ্ডের পর আসামি উজ্জল তার মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা যায়। পরিচয় গোপন করে সেখানে বসবাস শুরু করে। পরে সেখানকার স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। এর ছয় মাস পর মোছা. নাছিমা খাতুন নামে এক নারীকে বিয়ে করে উজ্জল। বর্তমানে তাকে নিয়ে গাজীপুরে বসবাস করে আসছিল। তাদের ১০ বছর এবং তিন বছর বয়সী দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বগুড়ায় নিজ বাড়ি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ রাখে উজ্জল। কিন্তু কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারে, হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়েছে। সংবাদ পাওয়ার পর থেকে সে আশুলিয়ার একটি ভাড়া বাসায় স্বপরিবারে আত্মগোপন করে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৩-এর আভিযানিক দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।