• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    কথিত বিজ্ঞানীরা আজ বিজ্ঞানী

    গত কয়েকদিন যাবত বিজ্ঞানীদের নোবেল প্রাইজ দেওয়া চলছে। ইউরোপ-আমেরিকা মানুষ বিজ্ঞান চর্চায় এগিযে যাচ্ছে, এই নোবেল প্রাইজ যেন সেই কথাই প্রকাশ করতে চায়। আমার গত পোস্টে লিখেছি, পীযূষ বন্দোপাধ্যায় তার কবিতায় বলেছে- ‘হে পশ্চাৎপদ মোল্লা মৌলভী তোরা কবে হবি বিজ্ঞানমুখী’ ?

    কথিত বিজ্ঞানীরা আজ বিজ্ঞানী
    কি সুন্দর কথা। মোল্লা-মৌলভীদের বিজ্ঞানমুখী হতে বলে। অথচ ইতিহাস সাক্ষী দেয়, ইউরোপে যে বিজ্ঞান চর্চা হয়েছিলো তার শুরু ছিলো ১৭শ’ শতাব্দী থেকে। ১৭শ’ শতাব্দীর পূর্বে পশ্চিমাদের মধ্যে তেমন বিজ্ঞানীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এ জন্য তারা দাবি করে, ১৭’ শতাব্দী থেকে নাকি আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা ! উইলিয়াম গিলবার্ট, কেপলার, গ্যালিলিও, স্নেল, বাইসেল প্যাসকেল, রবার্ট বয়েল, রবার্ট হুক, আইজাক নিউটন সবাই যেন ১৭শ’ শতাব্দীতে এসে হঠাৎ করে টপ টপ করে পড়া শুরু করে। রহস্যটা কি ?

    অথচ মুসলিম বিজ্ঞানীদের সময়টা দেখুন-

    মুসা আল খোয়ারিজমি (৭৮০-৮৫০)
    জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৪)
    আব্বাস ইবনে ফিরনাস (৮১০-৮৮৭)
    আল বিরুনি (৯৭৩- ১০৪৮)
    আবু নাসের আল ফারাবি (৮৭২-৯৫০)
    আল বাত্তানি (৮৫৮ – ৯২৯)
    ইবনে সিনা (৮৯০ – ১০৩৭)
    ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৬৯)
    ওমর খৈয়াম (১০৪৮ – ১১৩১)
    ইবনে কুরা (৮২৬- ৯০১)
    আবু বরক আল রাজী (৮৬৫ –৯২৫)
    আল কিন্দি (৮০১-৮৭৩)
    ইবনে আল হাইথাম (৯৬৫ – ১০৪০)
    ইবনে যুহর (১০৯১ – ১১৬১)
    ইবনে খালদুন (১৩৩২ – ১৪০৬)
    ইবনে আল বাইতর (১১৯৭ – ১২৪৮)
    ইবনে রুশদ (১১২৬– ১১৯৮)

    তারমানে মুসলমানরা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে, তখন ইউরোপ অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকারে। কিন্তু কিভাবে পেলো ইউরোপীয়রা সেই জ্ঞান বিজ্ঞানের ছোয়া, আসুন দেখি-

    ১) বাগদাদ পতন : ১২৫৮ সালে হালাগু খান মুসলিম জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু বাগদাদ নগরীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ধ্বংস করে মুসলিম জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র বাইতুল হিকমাহ লাইব্রেরী। এই লাইব্রেরী থেতে মুসলমানদের অনেক জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা চুরি যায়, যা পরবর্তীতে ইহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি করাত্বয় করতে সক্ষম হয়। (https://goo.gl/klkH4K)

    ২) স্পেন পতন : ১৪৯২ সালে পতন হয় স্পেন। এ সময় স্পেন ছিলো মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, যেখানে বিশাল লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত ছিলো মুসলিম বিজ্ঞানীদের গবেষণাধর্মী বইসমূহ। স্পেন দখলের পর খ্রিস্টানরা স্পেনের লাইব্রেরীগুলো দখল করে, তারা অনেক বই সরিয়ে ফেলে, অনেক বই নদীতে ফেলে দেয়, আবার অনেকগুলো আগুনে ধ্বংস করে ফেলে।

    ১৫শ’ শতাব্দীতে (প্রায় ১৬শ’ শতাব্দী) মুসলিম বিজ্ঞানীদের থেকে চুরি করা বইগুলো নিয়েই ১৭শ’ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের মধ্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের সূচনা ঘটে, যাকে তারা নাম দিয়েছিলো ১৭শ’ শতাব্দীর আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা। মুসলমানদের বইগুলো তারা অনুবাদ করে প্রকাশ করতো এবং সাজতো চাইতো বড় বিজ্ঞানী।

    তবে মুসলিমদের লিখিত বই সমূহ অধিকাংশ ছিলো আরবী ভাষায়, খ্রিস্টানরা আরবী খুব একটা বুঝতো না, কিন্তু ইহুদীরা বুঝতো। তাই খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বইগুলো ইহুদীদের কাছে দিয়েছিলো অনুবাদের জন্য। ইহুদীরা ছিলো ধূর্ত। তারা বলতো- ‘একটা একটা বই দিলে হবে না, সব দাও, আমরা ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করে দিবো’। ইহুদীদের এ কথা শুনে খ্রিস্টানরা তাদেরকে অধিকাংশ বই দেয়, যেখান থেকে ইহুদীরা বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা নিজেদের কাছে রেখে দেয়। এই কারণে ইহুদীদের মধ্যে বেশিরভাগ কথিত বিজ্ঞানীর দেখা মিলে।

    লেখার শুরুর অংশ, মানে ‘নোবেল পুরষ্কার’ দিয়ে আমার লেখা শেষ করছি। নোবেল পুরষ্কার কে পেলো আর কে না পেলো সেটা নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই । কারণ নোবেল পুরষ্কার পেলেই কেউ বড় হয় না, আবার না পেলেও কেউ ছোট হয় না। দ্বিতীয় হিটলার হিসেবে কুখ্যাত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী মোনাচেম বেগিন কিংবা কসাই শিমন পেরেজ শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলো, বারাক ওবামা ইরাকে মুসলিম গণহত্যা দীর্ঘায়িত করে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলো, ড. ইউনুস বাংলাদেশে সূদখোরী ‍শুরু করে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলো। নোবেলের শান্তিতেই যখন এত অশান্তি, তখন বাকিটার অবস্থা কি, আপনরাই বলুন ?

    ছবি: মুসলিমদের মধ্যে আবির্ভাব হওয়া শীর্ষ বিজ্ঞানীদের তালিকা, যারা প্রায় সবাই ১৭শ’ শতাব্দীর আগে এসেছে।