• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    দ্রুত ওজন বাড়ার জন্য দায়ী ১০টি ভুল অভ্যাস


    অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ওজন বাড়ানো যেমন সোজা, ওজন কমানো ঠিক তেমনি কঠিন কাজ। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল করে তেলে ভাজা ওমলেটের তুলনা কী ডিম সিদ্ধের সাথে হয়? কিংবা হাতের কাছে মচমচে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থাকতে সালাদ খেতে কার ভালো লাগে বলুনতো? কিন্তু বাড়তি ওজনের জন্য ছুটতে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে, গিলতে হচ্ছে ওষুধ অথবা যাদের কোন শারীরিক অসুবিধা হচ্ছেনা তারাও জানেন যে আছেন কতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। একটু বাড়তি ওজন কমিয়েই দেখুন না কতটা ঝরঝরে বোধ করবেন। আয়নায় নিজেকে দেখতেও কতটা ভালো লাগে আর বন্ধু বান্ধবের প্রশংসা তো বাড়তি পাওনা। কিন্তু বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলার ইচ্ছেটার রাশ টেনে ধরে আমাদের কিছু অভ্যাস তা জানেন কী? আসুন জেনে নেয়া যাক তেমনি কিছু অভ্যাস এর কথা।


    ১)ফ্রিজ ভর্তি আকর্ষণীয় খাবার-
    আমাদের অনেকেরই ফ্রিজে কিছু মজাদার খাবার থাকেই। যেমন জ্যাম, জেলি,মিষ্টি,পনির, মাখন,সন্দেশ আরও কত কী! খিদে লাগলেই হলো ফ্রিজ খুলেই খেয়ে নেই গপাগপ। ওজন বেড়ে যায় এমন অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসে। আজই একটি ছোট্ট পরিবর্তন আনতে পারেন। ফ্রিজে এনে রাখুন মৌসুমী তাজা ফলমুল ও শাকসবজি, আর আকর্ষণীয় উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার ফ্রিজে মজুদ করা বন্ধ করুন। অবসর সময়ে সালাদ কেটে বাক্সে ভরে ফ্রিজে রাখুন। খিদে পেলে খেয়ে নেবেন।

    ২)কম পরিমাণে পানি-
    স্থুলতার একটি অন্যতম কারণ যথেষ্ঠ পরিমানে পানি পান না করা। ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায় স্থুলতার সাথে পানি পান করার একটি গভীর সর্ম্পক রয়েছে। পানি পানের পরিমান বৃদ্ধি ওজন বৃদ্ধির ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ পানি পানের পরিমান বাড়িয়ে দিন, ওজন কমবেই। আমেরিকান ক্যামিক্যাল সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা যায় যারা দৈনিক কমপক্ষে দুই থেকে আট গ্লাস পানি পান করেন প্রতি বেলা আহারের আগে তাদের ওজন কমার হার মাসিক প্রায় দশ পাউন্ড।

    ৩)প্রোটিন খাওয়া বাদ দেয়া-
    অনেকেই ডায়েট এ আছি বলে খাদ্য তালিকা থেকে প্রোটিন বাদ দিয়ে দেন, যেটা মোটেও উচিত নয়। কারণ শরীরের ক্ষয়পূরণের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গরু খাসির মাংসটা এড়িয়ে যেতে পারেন। খেতে পারেন চামড়া ছাড়া মুরগীর মাংস, ছোটো বড় মাছ তবে সব কিছুই নিদিষ্ট পরিমানে। ডিম ওমলেট না খেয়ে সিদ্ধ খান, ওজন কমাতে চাইলে কুসুম না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। চাইলে প্রতিদিন কয়েকটি বাদাম খেতে পারেন।

    ৪)নাশতা না খাওয়া-
    সকাল বেলা আমরা অনেকেই নাশতা না খেয়েই বেড়িয়ে পড়ি, কখনো তাড়াহুড়োয় কিংবা আলসেমিতে। যার কারনে আমাদের মস্তিষ্কে একটি এলার্ম পৌঁছায় যে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তখন মেটাবলিজম হয় ধীরগতিতে।
    শরীরে জমে থাকা ক্যালোরি বার্ন হয় কম, যার ফলে ওজন বেড়ে যায়। অন্যদিকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ব্রেকফাস্ট যেমন সারাদিনের কর্ম উদ্দীপনা যোগায় ঠিক তেমনি মেটাবলিজমের হার ঠিক রাখে।

    ৫)চা কফিতে বাড়তি চিনি-
    চা কফি ছাড়া কি আমাদের একদিনও চলে? অনেকে আবার এক কাপ চায়ে মিশিয়ে নেন কয়েক চামচ চিনি বা ঘন দুধ, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজন কমাতে চাইলে চিনির পরিমান কমিয়ে নিন কিংবা চিনি ছাড়া চা পান করুন। খেতে পারেন ক্যালোরি বিহীন চিনিও। রঙ কিংবা আদা চা যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো তেমনি ওজন বাড়ার ঝুঁকি নেই। লাতে কিংবা ক্যাপাচিনো নয়, ব্ল্যাক কফি খান ওজন কমবেই

    ৬)”কী খাচ্ছি?” খেয়াল না করা-
    কী খাচ্ছি? কী খেলাম?- এসব নিয়ে আমাদের অনেকেরই মাথাব্যথা নেই একদম। যাই পাচ্ছি খাচ্ছি। বার্গার, পেস্ট্রি,সমুচা,সিঙ্গারা যা ইচ্ছে তাই। তাই রোগেও পড়ছি হরদম। হার্টের অসুখ, রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যাওয়া আরও কত কী! হয়তোবা মাঝরাত্রিতে একবাটি আইসক্রীম নিয়ে বসে পড়লাম ল্যাপটপ কিংবা টিভির সামনে। একদিন/দুদিনের জন্য ব্যাপারটা ঠিক আছে কিন্তু তা যদি হয়ে পড়ে নিত্যদিনের অভ্যাস তবে একটু ভাবতেই হবে আপনাকে-কী খাচ্ছেন?

    ৭)হুট করে ব্যায়াম, তারপর ছেড়ে দেয়া-
    হুটহাট করেই অনেকেই জিমে ভর্তি হয়ে যান। কিংবা ব্যায়াম করা শুরু করেন। ওজন হয়তো বা কমেও কয়েক কেজি। তারপর কয়েকদিন পর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যার ফলাফল ওজন বেড়ে যায় আগের চেয়েও। শরীর চর্চা একটা নিয়মিত ব্যবস্থা। তাই এটাকে নিয়মিতই চালিয়ে যেতে হবে।

    ৮)পানির স্থানে কোমল পানীয়-
    অনেকেই বাসা থেকে পানি নিয়ে বের হননা কিন্তু রাস্তায় তেষ্টা পেলে খেয়ে নেন কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস কিংবা এর্নাজি ড্রিংক।যা অতিরিক্ত ক্যালরির উত্সন।ফলাফল ওজন বাড়ছেই।

    ৯)কাল থেকে ডায়েট করবো-
    কাল থেকে ডায়েটিং শুরু করবো,আজ একটু খেয়েই নেই- এই ভেবে অনিয়ন্ত্রিত খাবার দাবার খেয়ে ফেলি আমরা অনেকেই। কিন্তু সেই “কাল” আর কখনোই আসেন ।এটাও ওজন বেড়ে যাবার কারণ বৈকি!

    ১০)সঠিক বিশ্রামের অভাব-
    ওজন কমাতে পরিশ্রমের কথা তো অনেক শুনেছেন,বিশ্রামের কথা শুনেছেন কি?ওজন কমানোর জন্য সঠিক ভাবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই মনে করেন যে রাত জাগলে ওজন কমে। এটা একটা খুব ভুল ধারণা। রাত জাগলে ওজন তো কমেই না, বরং কিছু বিশেষ হরমোনের কারণে ক্ষুধা বাড়ে ও অধিক খেয়েও তৃপ্তি মেলে না। যারা রাত জাগেন তাদের ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
    ২০০৬ সালে একদল গবেষক প্রায় ছয়হাজার নারীর উপর বছর ব্যাপী গবেষনা করে দেখেছেন যেসব নারী রাতে পাঁচঘন্টার কম ঘুমান তাদের ওজন বৃদ্ধির হার প্রাত্যহিক সাত ঘন্টা ঘুমানো নারীর চেয়ে প্রায় ৫.৫ পাউন্ড বেশি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেডিয়ে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। দুটি হরমোন ঘ্রেলিন ও ল্যাপ্টিন এর জন্য দায়ী।

    শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি পৃথক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ঘুমের তারতম্য ল্যাপ্টিনের নিঃসরন কমিয়ে দেয় এবং ঘ্রেলিনের নিঃসরন বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ ঘ্রেলিন ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় আর ল্যাপ্টিনের অভাব বোধ অনেক খাবার পরও এই অনুভূতি জাগায় যে পেট ভরেনি। তাই খাওয়াও হয় বেশি বেশি ওজনও বেড়ে যায়।

    উপরের দশটি কারনের একটিও যদি আপনার সাথে মিলে যায় তবে তা বদলে ফেলবার সময় এখনি। আমি তো শুরু করেছি বদভ্যাসকে পাল্টিয়ে ফেলার আয়োজনে, আপনি শুরু করছেন কবে?